ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীলঙ্কার শঙ্কা বাড়িয়ে চা রপ্তানি ২৩ বছরে সর্বনিম্ন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মে ২০২২
  • ১৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কার এক চিরসবুজ চা বাগানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আরুলাপ্পান ইদেইজোডি। প্রতিদিন নিপুণ হাতে গাছের ডগা থেকে পাতা ছিঁড়ে জমা করেন কাঁধে ঝোলানো ঝুড়িতে। এভাবে এক মাস দৈনিক ১৮ কেজির মতো চা পাতা তুলেছেন আরুলাপ্পান, তার স্বামী ও আরেক সহকর্মী। সেগুলো বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি। অংকটা শুনতে বড় হলেও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে এর প্রকৃত মূল্য বেশ কম- মাত্র ৮২ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭ হাজার ২০০ টাকার মতো।

আরুলাপ্পানের মতে, এটি যথেষ্টর ধারেকাছেও নেই। কারণ এই আয় দিয়েই তিন সন্তান, বৃদ্ধ শাশুড়িহ ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ মেটাতে হবে তাকে। ৪২ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আগে আমরা প্রায়ই দুই ধরনের সবজি খেতাম, এখন মাত্র একটি খেতে পারি।

 

আরুলাপ্পানের মতো এমন দুরবস্থা এখন শ্রীলঙ্কার লাখ লাখ মানুষের। দেশটিতে পর্যটন শিল্পে বিপর্যয় থেকে যে সমস্যার শুরু হয়েছিল, তা আরও ভয়াবহ হয়েছে সম্প্রতি চা শিল্পে ধস নামার কারণে। সরকারি হিসাবে, শ্রীলঙ্কার চা রপ্তানি গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধান রপ্তানিপণ্য হলো চা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট শুরুর আগে প্রতি বছর চা রপ্তানি করে তারা বছরে ১৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় করতো। তবে এতে বাঁধ সাধে রাসায়নিক সারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এর পেছনে শতভাগ জৈব সার ব্যবহারকারী হওয়ার উদ্দেশ্যটা ভালো থাকলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উৎপাদনে।

পরে সমালোচনার মুখে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ততদিনে শুরু হয়ে গেছে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতালাভের পর থেকে লঙ্কানদের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। বৈদেশিক মুদ্রার মারাত্মক ঘাটতির কারণে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত সার আমদানি করতে ব্যর্থ হয় দেশটি। যার ফলে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ চার মাসে এক বছর আগের তুলনায় চা উৎপাদন কমে যায় প্রায় ১৮ শতাংশ।

কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার চা রপ্তানি কমে ৬ কোটি ৩৭ লাখ কেজিতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এর আগের বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৯৮ লাখ কেজি।

১৯৯৯ সালের পর প্রথম প্রান্তিকে এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে কম চা রপ্তানির রেকর্ড। ওই বছর দেশটি ৬ কোটি ৩ লাখ কেজি চা রপ্তানি করেছিল।

 

চা রপ্তানি কমার ফলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এই খাত থেকে শ্রীলঙ্কার আয়ও কমেছে ব্যাপকভাবে। গত বছর এ সময়ে দেশটি চা রপ্তানি করে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করলেও এ বছর পেয়েছে মাত্র ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এই বিপর্যয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা প্রধানত রাসায়নিক সার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। তবে এর পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্তত ১০ শতাংশ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। কারণ যুদ্ধরত দেশ দুটি শ্রীলঙ্কার সুগন্ধযুক্ত কালো চায়ের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শ্রীলঙ্কার শঙ্কা বাড়িয়ে চা রপ্তানি ২৩ বছরে সর্বনিম্ন

আপডেট টাইম : ১১:৩১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্রীলঙ্কার এক চিরসবুজ চা বাগানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন আরুলাপ্পান ইদেইজোডি। প্রতিদিন নিপুণ হাতে গাছের ডগা থেকে পাতা ছিঁড়ে জমা করেন কাঁধে ঝোলানো ঝুড়িতে। এভাবে এক মাস দৈনিক ১৮ কেজির মতো চা পাতা তুলেছেন আরুলাপ্পান, তার স্বামী ও আরেক সহকর্মী। সেগুলো বিক্রি করে আয় হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রীলঙ্কান রুপি। অংকটা শুনতে বড় হলেও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে এর প্রকৃত মূল্য বেশ কম- মাত্র ৮২ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭ হাজার ২০০ টাকার মতো।

আরুলাপ্পানের মতে, এটি যথেষ্টর ধারেকাছেও নেই। কারণ এই আয় দিয়েই তিন সন্তান, বৃদ্ধ শাশুড়িহ ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ মেটাতে হবে তাকে। ৪২ বছর বয়সী এ নারী বলেন, আগে আমরা প্রায়ই দুই ধরনের সবজি খেতাম, এখন মাত্র একটি খেতে পারি।

 

আরুলাপ্পানের মতো এমন দুরবস্থা এখন শ্রীলঙ্কার লাখ লাখ মানুষের। দেশটিতে পর্যটন শিল্পে বিপর্যয় থেকে যে সমস্যার শুরু হয়েছিল, তা আরও ভয়াবহ হয়েছে সম্প্রতি চা শিল্পে ধস নামার কারণে। সরকারি হিসাবে, শ্রীলঙ্কার চা রপ্তানি গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ এশীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির প্রধান রপ্তানিপণ্য হলো চা। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট শুরুর আগে প্রতি বছর চা রপ্তানি করে তারা বছরে ১৩০ কোটি ডলারের বেশি আয় করতো। তবে এতে বাঁধ সাধে রাসায়নিক সারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এর পেছনে শতভাগ জৈব সার ব্যবহারকারী হওয়ার উদ্দেশ্যটা ভালো থাকলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে উৎপাদনে।

পরে সমালোচনার মুখে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ততদিনে শুরু হয়ে গেছে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতালাভের পর থেকে লঙ্কানদের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। বৈদেশিক মুদ্রার মারাত্মক ঘাটতির কারণে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত সার আমদানি করতে ব্যর্থ হয় দেশটি। যার ফলে ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ চার মাসে এক বছর আগের তুলনায় চা উৎপাদন কমে যায় প্রায় ১৮ শতাংশ।

কাস্টমসের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কার চা রপ্তানি কমে ৬ কোটি ৩৭ লাখ কেজিতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এর আগের বছর জানুয়ারি থেকে মার্চে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৯৮ লাখ কেজি।

১৯৯৯ সালের পর প্রথম প্রান্তিকে এটিই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে কম চা রপ্তানির রেকর্ড। ওই বছর দেশটি ৬ কোটি ৩ লাখ কেজি চা রপ্তানি করেছিল।

 

চা রপ্তানি কমার ফলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এই খাত থেকে শ্রীলঙ্কার আয়ও কমেছে ব্যাপকভাবে। গত বছর এ সময়ে দেশটি চা রপ্তানি করে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করলেও এ বছর পেয়েছে মাত্র ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এই বিপর্যয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা প্রধানত রাসায়নিক সার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন। তবে এর পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অন্তত ১০ শতাংশ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তারা। কারণ যুদ্ধরত দেশ দুটি শ্রীলঙ্কার সুগন্ধযুক্ত কালো চায়ের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা।